ইন্টারনেট আধুনিক বিজ্ঞানের শাখের করাত এমনটি বলা হয়ে থাকে। এর যেমন উপকারিতা আছে, আছে অপকারিতা ও ব্যাপক ক্ষতির ঝুঁকি। এই ঝুঁকি হ্রাসে ২০০৪ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপদ ইন্টারনেটের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ অসচেতনতা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইবিষয়ক ঝুঁকি, যার মূল ভুক্তভোগী হচ্ছে নারী, শিশু ও সামাজিক স্থিতাবস্থা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘সেফবর্ডার প্রজেক্ট’-এর আওতায় ২০০৪ সালে প্রথম ‘নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস’ পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিশ্বের ১৮০ দেশ ও অঞ্চলে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মঙ্গলবার দিবসটি পালিত হয়। সেই হিসেবে গত ৬ ফেব্রুয়ারি চলতি বছরের নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস উদযাপিত হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘টুগেদার ফর এ বেটার ইন্টারনেট’। এ বছর বাংলাদেশেও সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়।
দিবস উপলক্ষে ডিসেম্বর থেকে দুই মাসব্যাপী সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের আওতাধীন ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি। এ কর্মসূচির আওতায় দেশের বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে নিরাপদ ইন্টারনেট বিষয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সংস্থাটি জানায়, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, যশোর ও কিশোরগঞ্জে নিরাপদ ইন্টারনেট বিষয়ে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সেমিনারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সাইবার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া হয়।
ডিএসএর মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান সমাজের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ ইন্টারনেটের প্রভাব তুলে ধরে বলেন, ইন্টারনেট জগৎ নিরাপদ না হলে এর সরাসরি প্রভাব পড়ে সমাজ ও সমাজের স্থিতিবস্থার ওপর। বর্তমানে সময়ে নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিতে বড় চ্যালেঞ্জ অসচেতনতা। ইন্টারনেটে তরুণ বিশেষ করে মেয়েরা ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি ও ভিডিও বিনিময় করছে। সম্প্রতি আরেকটি ঘটনা ঘটছে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কলের। অপরিচিত কারও সঙ্গে আপত্তিজনক ভিডিও কলে অংশ নিয়ে পরবর্তী সময়ে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে। এসব বিষয় সমাজে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভুক্তভোগীদের বড় অংশ নারী ও শিশুরা।
তিনি বলেন, এজন্য আমাদের কার্যক্রমগুলোতে শিক্ষার্থীদের অন্তত অর্ধেক যেন ছাত্রীরা আসেন, সে বিষয়ে জোর দিয়েছিলাম। সাইবার স্পেসে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়লে সরকারি সাহায্য পেতে নতুন হটলাইন ‘১৩২১৯’ চালু করা হয়েছে জানিয়ে ডিএসএ মহাপরিচালক বলেন, ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের ‘টিন এজার’ বলা হয়। তাদের দ্রুত সেবা দিতেই ‘১৩২১৯’ হটলাইন করা হয়েছে।
এআই ভবিষ্যতে শিশুদের মানসিক বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মনরোগ বিশেষজ্ঞ ড. মোহিত কামাল। তিনি বলেন, এআইর মতো প্রযুক্তিগুলো নিজেরাই অনেক কাজ করছে। ফলে মস্তিষ্কের চর্চা হয় না। জন্মের ১৮ মাসের মধ্যেই স্নায়ুকোষের গঠন হয়ে যায়। বাকি সময়ে স্নায়ুকোষের মধ্যে শুধু সংযোগ বাড়তে থাকে যেটিকে বলা হয় ‘সাইনাপটিক জাংশন’। যারা মস্তিষ্কের চর্চা বেশি করবে, তাদের ক্ষেত্রে এই গঠন সুদৃঢ় হবে। এখন এআই যদি সব করে দেয় আর মস্তিষ্কের চর্চা কমে যায় তাহলে মেধার বিকাশ, সৃজনশীলতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, মনে রাখার এবং বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা হ্রাস পাবে। এই প্রযুক্তিগুলো নতুন কাজেই এমনটা হবে এবং হলে এর প্রভাব কতখানি গুরুতর হবে সেটি এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে এতদিনকার অভিজ্ঞতায় এবং মানুষের ওপর প্রযুক্তির প্রভাব দেখে এমন ভবিষ্যৎ অনুমান করা যায়।
অনিরাপদ ইন্টারনেট আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়াতে পারে বলেও মনে করেন এই মনরোগ বিশেষজ্ঞ, বিশেষ করে কিশোর কিশোরীদের মধ্যে। মোহিত কামাল বলেন, এআইর একটি ভয়ংকর দিক দেখছি একজনের ছবি আরেকজনের শরীরে বসিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা এমন ঘটনা অভিভাবকদের জানাতেও পারেন না। কিছু কেস হয়তো আমার মতো মানুষের কাছে আসে। চেষ্টা করি সমাধান করার, অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য নেই। কিন্তু ভুক্তভোগীরা মানসিক বিষণ্নতায় ভোগেন, এমনকি আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার মতো অবস্থায় চলে যান।
নিউজ লিংকঃ https://www.kalbela.com/ajkerpatrika/khobor/64101